দুই জেলায় বন্যার উন্নতি, নেত্রকোনায় ১২৩ গ্রাম প্লাবিত

নভেম্বর 13, 2024 - 21:17
দুই জেলায় বন্যার উন্নতি, নেত্রকোনায় ১২৩ গ্রাম প্লাবিত

বৃষ্টি না হওয়ায় শেরপুর ও ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এই দুই এলাকার বহু মানুষ এখনও পানির নিচে। তোমার ত্রাণ দরকার। নেত্রকোনার আরও তিন উপজেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে। 123টি গ্রামের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলার ১৮৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ করা হয়েছে।

গত রোববার সন্ধ্যায় শেরপুরের নকলা উপজেলা ইউনিয়নের গজারিয়া গণপদ্দি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। আব্দুর রাজ্জাক (৫০ বছর) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এর আগে নালিতাবাড়ীতে বন্যায় দুই ভাইসহ চারজনের মৃত্যু হয়।

শেরপুর জেলা উপজেলা পানি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা জানান, রোববার বিকেল থেকে কোনো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মহর্ষি ও সোমেশ্বরী নদীর পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় জনিগাতি, শ্রীবরদী ও শেরপুর সদরে পানির স্তর কমে গেছে। সোমবার শিরপুর সদরের ২০টি ইউনিয়নের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে জানান নকুল। এ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের বন্যা ধীরে ধীরে নিচু এলাকায় প্রবেশ করছে। এখনও প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে।

গতকাল বিকেলে শেরপুর-সদর উপজেলার কয়েকটি পাকুরিয়া ও ধারা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, চৈতঙ্কীরা ভাটারা থেকে দলকান্দা হয়ে বাদাতেগাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশে বাদাতেগাড়িয়া ও ধারা নামাপাড়া গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।

এ সময় দেহারার নামাপাড়া গ্রামের কৃষকরা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। শামীম ও মিয়া জানান, গত দুই দিন থেকে ঘরে পানি বাড়ছে। তিনি এখন সপরিবারে অন্যত্র চলে গেছেন। আমি কোন সাহায্য পেতে পারিনি

জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান প্রথম আলো</em>কে বলেন, বন্যা দুর্গতদের সুবিধার্থে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও ব্যবসায়ীরা কাজ করছে।

উত্তর নকশীর নালিতাবাড়ী গ্রামের আলেয়া বেগম (৫২) পানি ভেঙে বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন ঘরে পানি থাকে। Randong এ কোন bao (সিস্টেম) নেই। বাজার তাইকা কাপড় খাওন আইনা কোন রহম দিন কদাইতাছি। দুর্ভাগ্যবশত, এখনও কোন ত্রাণ নেই. কেউ তাকালো না।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী (ইউএন) মুখপাত্র মাসুদ রানা জানান, চার দিনে ২৬ হাজার পরিবারকে সেদ্ধ খিচুর ও শুকনো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।

বিশুদ্ধ পানির অভাব
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার অনেক এলাকায় পানি নেমে গেছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে ধোবাউড়া উপজেলা সদরের ব্রিজপাড় এলাকায় পানির ওপর দিয়ে লোকজনকে হাঁটতে দেখা যায়। ঘরে পানি ঢুকেছে। গুজিয়ারকান্দ ইউনিয়নের ধোবাউড়া সদর গ্রামের সৌরভ সরকার জানান, রোববার থেকে তার এলাকায় পানির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

চলমান বন্যায় এ উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। কাউন্টি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বলেছেন, 58,000 মানুষ পানিতে আটকা পড়েছে। এছাড়া ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর আমন ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে।

ধোবাউড়া ইউএন নিশাত শারমিন বলেন, বেসরকারিভাবে কিছু সহায়তা দেওয়া হবে। মানবিক সহায়তা সরবরাহ সমন্বিত পদ্ধতিতে বিতরণ করা হয়।

পাঁচটি শহরে বন্যা হয়েছে
ভারি বর্ষণ ও ভূমিধসের কারণে দুর্গাপুর, কর্মকান্দা ও নেত্রুকুনায় বন্যা দেখা দেয়, যা নেত্রকুনা সদর, পূর্বদরা ও বারহাটা জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। অন্তত 25টি পৌরসভার 123টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় কর্মকান্দা শহরের উদহল্লী নদীতে পানি বন্যা সীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তবে জেলার প্রধান নদী সোমেশ্বরী ও কংসে জলস্তর কিছুটা কম ছিল। তবে ধনু, নেতাই, মহাদেও, মঙ্গলেশ্বরী ও মাগুরার মতো বিভিন্ন বড় ও ছোট নদীতে পানির উচ্চতা স্থির রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা জেলা প্রশাসক মো. মোফাজল হোসেন বলেন, বন্যার কারণে ১৮৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

আঞ্চলিক কৃষি উন্নয়ন দপ্তরের ডেপুটি ড. নুরজামান জানান, এ জেলার ১০টি ওয়ার্ডে ১০৩৫৯০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়। আকস্মিক বন্যায় পাঁচটি কাউন্টির 18,104 হেক্টর ফসল প্লাবিত হয়েছে।

ডেপুটি হাইকমিশনার বনানী বিশ্বাস জানান, বন্যা মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কর্মকান্দা, দুর্গাপুর, পূর্বদরা ও নেত্রকোনা সদর জেলায় নগদ ৩ লাখ, শুকনো পশুর আড়াই হাজার প্যাকেট ও ৬০ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

Noyon Mojumder Noyon Mojumder With over 01 years of experience in the field of journalism, Noyon Mojumder heads the editorial operations of the Kaler Protidin as a Editor