কুমিল্লায় গ্যাসের জন্য হাহাকার

গ্যাস–সংকটের কারণে গ্রাহকেরা ভোগান্তির মধ্যে আছেন। দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেই।

Jan 11, 2025 - 11:02
কুমিল্লায় গ্যাসের জন্য হাহাকার

ঘড়ির কাঁটা সাড়ে তিনটা বাজলে গৃহবধূ রোজিনা আক্তারের ঘুম ভাঙে। পরিবারের বাকি সদস্যরা তখনও ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে থাকলেও প্রচণ্ড শীতের এই গভীর রাতে গৃহবধূর ঘুমিয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ যখন রাত হয় এবং সকাল হয়, তখন তার গ্যাসের চুলার আগুন আর জ্বলে না। এটি প্রস্তুত না হলে স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের সকল সদস্যকে খাবারের জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এ কারণে কুমিল্লা নগরের কালিউড়ি এলাকার একটি বাড়ির বাসিন্দা প্রায় এক মাস ধরে গভীর রাত জেগে ছিলেন। শাহজাহানের স্ত্রী রোজিনা আক্তার। এখন এটাই তার সংসারে দৈনন্দিন জীবন।

তবে এমন ঘটনা শুধু এই গৃহবধূর ক্ষেত্রেই ঘটেনি, গ্যাস সংকটে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এমন সমস্যা ও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কুমিল্লা নগরীর কয়েক হাজার পরিবার। কারণ প্রতি বছর শীত শুরু হলেই কুমিল্লা নগরী তীব্র গ্যাস সংকটে পড়ে। চারপাশের সবাই পেট্রল থেকে আর্তনাদ করছে বলে মনে হচ্ছে।

শীতের শুরু থেকেই গ্যাস সংকটে ভুগছি। সকালে গ্যাস উধাও হয়ে যায়। দিনের বেলায় চুলা চকচকে হতে থাকে।
কামরুন্নাহার, গৃহবধূ, কুমিল্লা নগর
নগরবাসী জানায়, ভোর পাঁচটার দিকে গ্যাস উধাও হয়ে যায়। তারপরে দিনে কোথাও গ্যাস দেখা দেয়, এবং সন্ধ্যায় বা রাতে কোথাও। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরু থেকে কুমিল্লা নগরী ও এর আশপাশে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। এতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসাও সমস্যায় পড়েছে।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিজিডিসিএল) কুমিল্লা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে। কোম্পানির প্রতিনিধিদের মতে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়া এবং শীতকালে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় এই অবস্থা।

কুমিল্লা নগরের অশোকতলা এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ কামরুন্নাহার বলেন, শীতের শুরু থেকেই গ্যাস সংকটে ভুগছি। সকালে গ্যাস উধাও।" দিনের বেলা উনুন চকচকে হতে শুরু করে। সন্ধ্যায় ভাল করে ভরে। বাড়িতে অতিথিরা আসেন। বাধ্য হয়ে ইটের চুলা তৈরি করে রান্না করতে হয়। আমি বলে শেষ করতে পারি না। bloating ভোগা

কয়েক বছর ধরে শীতকালে এই সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। গ্রাহক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন।
মেডিসিনের ডাক্তার। প্রিয় জনাব আনোয়ারুল ইসলাম, বাকরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক
নগরবাসীর সঙ্গে আলাপে দেখা গেছে, বৈধ সংযোগের তুলনায় বাকরাবাদের আবাসিক বাড়ি ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সংখ্যা কম নয়। বাকরাবাদে কতিপয় কর্মকর্তা ও অসাধু গ্যাস সরবরাহকারীদের যোগসাজশে এ অঞ্চলের সর্বত্র অবৈধ সংযোগের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর আত্মঘাতী হামলার সময় এ জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও এর সংখ্যা খুবই কম। এসব কারণে গ্যাস সংকটে পড়েছেন অনুমোদিত গ্রাহকরা।

বাকরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, এই কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোখালী, ফণী ও লক্ষ্মীপুর এলাকায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। তুলনায়, সরবরাহ পাওয়া যায় 210 থেকে 220 মিলিয়ন ঘনফুট। উৎপাদিত গ্যাসের 70 থেকে 72% এর মধ্যে 13টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবং 15% গৃহস্থালিতে পাঠানো হয়। এবং 7 শতাংশ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ব্যবহৃত হয় এবং বাকিটি কুমিল্লা ইপিজেড, বিএসআইসি, বিভিন্ন শিল্প, হোটেল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। কোম্পানির এখতিয়ারের অধীনে ছয়টি অঞ্চলে 4,080,028টি গৃহস্থালী গ্যাস সংযোগ রয়েছে। ১৩টি পাওয়ার প্লান্ট ছাড়াও ৯১টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ৫৭৫টি ছোট শিল্প ও স্মেল্টার, ১৫৬৩টি হোটেল ও রেস্তোরাঁ, ৮১টি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট, ১৮৪টি কারখানা ও রাসায়নিক সার কারখানা রয়েছে।

গতকাল বিকেলে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বাকরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন: আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলো</em>কে বলেন, “শীতকালে গ্যাস জমে সমস্যা সৃষ্টি করে। এতে গ্যাসের চাপ কমে। "এছাড়া, আমরা অনেক কম গ্যাস পাই।" গ্রাহকরা আগের চেয়ে বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন। ফলে গ্যাস সঞ্চালন লাইনের সংখ্যা বাড়েনি।

শহরের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতকালে ভোরের দিকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। এরপর দুপুর থেকে ২২টার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। অনেকবার দেখা গেছে গভীর রাতেও গ্যাস চালু হয় না। নগরীর বাগিচাগাঁও, রেসকোর্স, নিউ চৌধুরীপাড়া, হাউজিং, অশোকতলা, রানীর বাজার, ঠাকুরপাড়া, চানপুর, সুজানগর, কাটাবিল, চকবাজার ও ছোটরাসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কমতে শুরু করেছে।

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow