রত্না ছিলেন পরিবারের একমাত্র মেয়ে। সাংবাদিক মা ও ইঞ্জিনিয়ার বাবার ব্যস্ততার কারণে বেশির ভাগ সময় কাটত নানির সঙ্গে। নানিই তাঁর দেখভাল করতেন। ‘আমি বড় হতে গিয়ে একটা সময় বুঝতে পারলাম, শৈশব থেকে অনেকটা সময় একা থাকার কারণে আমার কেনাকাটা, শপিং করা বা বাড়তি কোনো কিছুতে অভ্যস্ততা নেই। একসময় তো মা আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন। তখনো মার্কেটে যাওয়া, রেস্টুরেন্টে খাওয়ায় অত বেশি অভ্যস্ত হতে পারতাম না। একই ভাবে যখন শুটিং করতাম, তখনো সবাই অবাক হতো। এক সিনেমা থেকে আরেক সিনেমার শুটিংয়ে যাচ্ছি, কিন্তু নায়িকা হিসেবে কোনো খাবার বা বাড়তি কোনো কিছুই আমাকে টানত না। অবাক হতেন অনেকে। তাঁরা দেখতেন, আরে আমি এফডিসির ১০ টাকার মুড়ি খেয়েই খুশি। এটাই আমি।’
আপনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, চাইলে আপনার দুই–চারটি বাড়ি–গাড়ি হতে পারত। তাহলে কি নায়িকা হয়ে বাড়ি–গাড়ি কোনো কিছুই করতে পারেননি? ‘তা করতে পারব না কেন? আমার বাড়ি–গাড়ি তো আছেই। একজন মানুষের যা দরকার হয়, তার সবই আমার আছে। আমি মিন করেছি, চাইলে বহু বাড়ি–গাড়ি–অর্থ থাকতে পারত। ফেসবুকে আরও কম লিখেছি। এগুলো আমাকে টানেনি। আমি শুটিং করে নিয়মিত মায়ের কাছে পারিশ্রমিকের সব টাকা একটু একটু করে জমাতাম। সেটা তো কম নয়’, বলেন তিনি।
কখনো কি অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন? সেই দিনগুলোর কথা বলবেন? ‘জীবন সব সময় একরকম চলে না। আমারও জীবনে ক্রাইসিস (সংকট) ছিল। আমার টাকার অভাব হয়েছে। তখন সিনেমার নায়িকা হয়ে মিউজিক ভিডিও, স্টেজের কাজগুলো করেছি। আমি জানি, আমার সঙ্গে এগুলো যায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব কাজ করেই অর্থের অভাব দূর করতাম। এমন না যে তখন আমার কাছে বড় বড় প্রস্তাব আসত না। এ ছাড়া চাইলে অর্থ দেবে এমন অনেক আত্মীয়, পরিচিত প্রযোজকসহ অনেকেই ছিলেন। কেউ বলতে পারবেন না, আমি কারও কাছে সাহায্য চেয়েছি।’
সম্প্রতি রত্না একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রতি মাসে তাঁর ইউটিউবের জন্য চারটা করে নাটক বানাবেন। সেখানে এফডিসির যেসব সহকর্মীর কাজ নাই, বেকার, তাঁদের দিয়ে অভিনয় করাচ্ছেন। এমনভাবে রত্না কাস্টিং করেন, যেন কেউ কাজ করে চলার মতো অর্থ পান। রত্না বলেন, ‘আমি এফডিসিতে প্রবেশের পর সব সময় চেষ্টা করেছি আমার কাছের মানুষদের ভালো রাখতে। তাদের জন্য কিছু করতে। শুধু তা–ই নয়, আমি একইভাবে স্বামী, সংসারের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। স্বামীর কাছে কোনো দিন দামি শাড়ি–গয়না, এমনকি একটা নাকফুলও চাইনি। পারতপক্ষে বাজার–সদাইটাও যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁকে না বলে পারা যায় না, ততক্ষণে বলি। সারাজীবন আমি সবার জন্য সবকিছু করেছি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। সেটা পেয়েছি কি না, সেই প্রশ্নই নিজেকে করি।’