বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত জেলা মতবিনিময় সভায় বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং জুলাই ও আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন দাবি ও প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়। বর্তমানে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে যা এই দাবি ও প্রস্তাবগুলোকে একত্রিত করবে। এরপর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা আলোচনা করে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করবেন।
৮ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেন। এসব এলাকায় “শহীদদের পরিবারের সঙ্গে এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাক্ষাৎ” শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সভায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সভায় অংশগ্রহণকারীরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও কো-অর্ডিনেটরদের কাছে সরকারি সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সবাই চায় পুরনো রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নতুন কিছু বের হোক। দ্বিতীয় স্বাধীনতায় অংশগ্রহণকারী সকলেই আশা করেন যে এদেশে আর ফ্যাসিবাদী শক্তি থাকবে না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জনাব নুসরাত তাবসেম
জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভার পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আগামী ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কেন্দ্র (টিএসসি) হলে দেশের বিভিন্ন জেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ক ও উপ-সমন্বয়কদের নিয়ে আরেকটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এই বৈঠকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আরও সংগঠিত করার বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়।
ছাত্র বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন, মূলত সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম, 1 জুলাই শুরু হয়েছিল এবং সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এ প্রেক্ষাপটে সক্রিয় ছিলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 158 জন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও সমন্বয়কারী রয়েছেন। এর নেতাদের মধ্যে ছাত্রশক্তি ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে একটি সংগঠনের সদস্য রয়েছে। তবে ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রশক্তির সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে একটি বিশাল অভ্যুত্থান ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজিব বাহভিয়ান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক। তারা দুজন গণতান্ত্রিক ছাত্রনেতাও ছিলেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা গত ৮-১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের ৪৪টি জেলা সফর করেছেন।
৪৪টি জেলায় মতবিনিময়
৮ সেপ্টেম্বর থেকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা পালাক্রমে দেশের আটটি অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। মুন্সীগঞ্জে মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে সফর শুরু হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে সফর শেষ হয়। এই ছয় জেলায় খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, বরগুনা, নাটোর, ঝিনাইদহ ও চাঁদপুরে মতবিনিময় সভায় ছাত্র সংঘর্ষ ও দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।
দুই সমন্বয়কারী দলের দ্বন্দ্বের কারণে নরসিংদীর বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। হবিগঞ্জ ও বগরি জেলায় বৈঠকে বাধা দিয়েছে রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন। স্থানীয় সমন্বয়কদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে শেরপুরে বৈঠক হয়। তাছাড়া ময়মনসিংহে স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধিতার কারণে ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীরা বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়াও প্রতিটি সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের অঞ্চলের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের পাশাপাশি সরকারি সংস্কারের ওপর জোর দেন।
জেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভায় অংশ নেওয়া পাঁচজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাদের মতে, স্থানীয় সমস্যা হিসেবে প্রায় প্রতিটি সভায় চাঁদাবাজির বিষয়টি উত্থাপিত হয়। বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্য থেকে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠবে বলে অনেক আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল।
খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী নুসরাত তাবাসসুম। তিনি প্রথম আলো</em>কে বলেন, সবাই চায় পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে নতুন কিছু তৈরি হোক। দ্বিতীয় স্বাধীনতায় অংশগ্রহণকারী সকলেই চায় ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশে আর উপস্থিত না হোক।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন যে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হয়, তার নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে দুজন—নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। তাঁরা দুজন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিরও নেতা ছিলেন।
ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা
বিভিন্ন সংসদে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পেশ করা হয়। সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে,
মতবিনিময়কালে জুলাই ও আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বজায় রাখা এবং আন্দোলনে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনসহ সব বিষয়ে সহযোগিতা করার প্রস্তাব করা হয়। এ ইস্যু ছাড়াও চাঁদাবাজি বন্ধ, টেন্ডারিং নীতির অবসান এবং শিক্ষা খাতের সংস্কারসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করার পর আমরা অনুভব করেছি যে মানুষ বিকল্প শক্তি খুঁজছে।
তরিকত ইসলাম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক
সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় সভা আয়োজনকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, এসব সভার মাধ্যমে সবাইকে নতুন রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কারী প্রথম আলো</em>কে বলেন, জেলা পর্যায়ের বক্তব্য ও প্রত্যাশার নথিভুক্ত করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। জেলা সফরে আসা আটটি সমন্বয় দলের সদস্যরা শিগগিরই বৈঠক করবেন। জনগণের প্রত্যাশার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনা হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম এই সফরে রামপুর অঞ্চলের একটি প্রতিনিধি দলের অংশ ছিলেন। তিনি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, “বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি, মানুষ বিকল্প জ্বালানি খুঁজছে।